সিলেট৭১নিউজ ::আমকারীজা ফাউন্ডেশন ও লাভদেশের ইয়াসমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পারিবারিক যৌথ সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ করেছেন নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী এনামুল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার চাচাতো বোন ও শ্যালিকা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইয়াসমিন চৌধুরী একদল সন্ত্রাসী নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর আমার বাসার গেইটে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় একটি জিডি করেছি। এছাড়াও সে একদল কথিত ইউটিউবারকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে ও আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দেশ বিদেশে মানহানী ঘটিয়ে অভিনব কায়দায় পারিবারিক সম্পত্তি গ্রাস করার পায়তারা করছে। এ সময় মা, ভাই ও বোনদের সাথে দুর্ব্যবহার করাসহ দোকানদার, বাসার ভাড়াটিয়া, ঘরের কাজের লোক, গ্রামের মসজিদের ইমামের সাথে উশৃঙ্খল আচরণের অভিযোগ করেন তিনি।
ইয়াসমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইয়াসমিন চৌধুরী যুক্তরাজ্য বাকলিস ব্যাংক এর পাবলিক রিলেশন অফিসার থাকাকালীন তার এক ইংলিশ কলিগকে বিয়ে করে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বেশ কয়েক বছর পরে তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক বিচিছন্ন করে এক কন্যাসন্তান নিয়ে পরিবারে ফিরে আসে। ২০১২ সালের দিকে ইয়াসমিন চৌধুরী আমকারীজা ফাউন্ডেশন ও লাভদেশ নামে এনজিও সংস্থা ও ব্যবসা চালু করে। এর সুবাধে সে বাংলাদেশে আসা যাওয়া শুরু করে। তখন আমার স্ত্রী নাজমিন চৌধুরী নগরের দর্শনদেউড়ী এলাকায় পায়রা ৩৭/৩৮ নম্বর বাসা এবং বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামের বাড়ির উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি দেখাশুনার দায়িত্ব দেন তাকে। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ বছরে ভাড়া বাবদ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে ইয়াসমিন। আমার শশুর মরহুম আব্দুল মুকিত চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আয়ের ৩ ভাগের ১ ভাগ চ্যারিটি সংস্থায় প্রদান করা হয়। বাকী অর্থ মা, ৪ বোন ও ১ ভাই পাওয়ার কথা। কিন্তু ইয়াসমিন তাদের কারো অংশ না দিয়ে পুরো টাকাই একাই আত্মসাৎ করে। এরপর পুরো ভূ-সম্পত্তি দখল করার পায়তারা শুরু করে।
উশৃঙ্খল আচরণের কারণে তাকে পুলিশ আটক করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ইয়াসমিনের মা আমার শাশুড়ি রওশন আরা চৌধুরী দেশে আসেন এবং সকলের পাওনার হিসাব দিতে বললে ইয়াসমিন উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় নিজ মাকে গালিগালাজ করে এবং পুলিশে দিতে উদ্যত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আমার শাশুড়িকে বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ দেখে এবং ইয়াসমিনের ঔদ্যত্যপূর্ণ আচরণ দেখে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ডেকে নিয়ে আটক করেন।
এ সময় ইয়াসমিনের কাকুতি মিনতি দেখে মুচলেকার মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে পরিবারের সকলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যৌথ সম্পতি বেআইনিভাবে নিজ দখলে রাখার অভিযোগ ও ভাইবোনদের সাথে চরম দুর্ব্যহার ও সকলের নামে বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা ও বানোয়াটি তথ্য সম্বলিত অভিযোগ দায়েরের কথাও উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন, সচতুর ইয়াসমিন ফেঁসে যাবে আঁচ করতে পেরে যুক্তরাজ্যে চলে যায়। দীর্ঘদিন আর এ ব্যাপারে সে কোনো কথা বলেনি। গত কয়েক মাস থেকে যুক্তরাজ্যে বসে টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে পরিবার পরিজনদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে থাকে। সে টিকটকের মাধ্যমে ঢাকার রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত ও গ্রামের বিভিন্ন সহজ সরল মানুষকে সাহায্যের কথা বলে অর্থ জোগাড় করে। অসহায় মানুষদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করলেও সে টাকা ইয়াসমিন আত্মসাৎ করে। একটি চ্যারিটি সংস্থা থাকলে তার হিসেব নিকেশ থাকতে হয়। কিন্তু তার এই সংস্থার কোনো হিসেব নিকেশ নেই।
এছাড়া ইয়াসমিন চৌধুরী পায়রার বাসা নিয়ে মিথ্যে অপপ্রচার করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইয়াসমিন চৌধুরী নগরীর ৩৭/৩৮ পায়রার বসবাস করছে। অথচ সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে সে তার পৈত্রিক বাসস্থলে থাকতে পারছে না। গত কোরবানী ঈদে কোরবানীর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়িতে আমি দুটি গরু পাঠালে সে গরুগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে উল্টো আমিসহ আমার ফুফাতো ভাই সালেহ আহমদ খসরু, আমার চাচাতো ভাই ফয়ছল আহমদ চৌধুরী ও ফাহিম আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় একটি জিডি করে এবং বাড়িতে দুই গাড়ি পুলিশ নিয়ে আসে। ঈদের দিন এই গরুগুলো জবাই করে তার “লাভদেশ” সংস্থার নামে মাংস বিতরণ করে।
তিনি বলেন, ইয়াসমিন ভাড়াটিয়া শামীম আহমদকে জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে দেয়। ভাড়াটিয়া সকল দোকানদারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ১১ লক্ষ টাকা করে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে এবং দোকানের মালামাল জোরপূর্বক নিয়ে যায়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দোকানদাররা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এবং থানায় জিডি করেন। এ সকল ঘটনায় আমরা আদালতে মামলা করলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আদালত ১৪৫ ধারা জারি করলেও ইয়াসমিন তা মানছে না। ১৪৫ ভঙ্গ করে সম্প্রতি সে ৮টি দোকানের মধ্যে দুটি দোকানের তালা ভেঙ্গে মালামাল লুট করে লাভদেশের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এ ঘটনায় দোকানদার রফিক আলী মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে ইয়াসমিনের সহযোগী রাহিনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মালামাল উদ্ধার করা হয়নি।
পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনেও ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা উঠে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, ইয়াসমিন চৌধুরী উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবারের সকলের সম্পত্তি একা জবরদখল করতে চায়। প্রতিমাসে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ ৫৬ হাজার টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করে নিয়ে যায়। যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি ইয়াসমিন ও তার সংঘবদ্ধ চক্রের হাত থেকে উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সিলেট৭১নিউজ/টিআর